পৃথিবীতে বেঁচে থাকা প্রত্যেকটা মানুষের যৌন চাহিদা আছে। তবে সবার ক্ষেত্রে যৌনশক্তি এক রকম থাকেনা। হয়তবা কারো যৌন চাহিদা বেশি থাকে, আবার কারো কারো যৌন চাহিদা কম থাকে।
আর যাদের কম থাকে, তারা আসলে যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় গুলো জানতে চায়।
তো আপনি চাইলে বেশ কিছু উপায়ে নিজের যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারবেন। মূলত সেই উপায় গুলো কে নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় কি?
কোনো কারনে যদি আপনি অনুভব করতে পারেন যে, আপনার যৌন চাহিদা কম। তাহলে আপনি বেশ কিছু উপায়ে আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে পারবেন। আর সেই যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় গুলো হলো,
- খাবার খাওয়ার মাধ্যমে,
- নিয়ম ফলো করে,
- অভিজ্ঞ ডক্টরের মাধ্যমে,
তো যারা আসলে নিজের যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে চান, তাদেরকে উপরে দেখানো নিয়ম গুলো ফলো করতে হবে। তাহলে তাদের যৌন শক্তি পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
তবে একজন মানুষ কিভাবে সেই নিয়ম গুলো ফলো করবে। এবার আমি ধাপে ধাপে সেগুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। যাতে করে আপনার বুঝতে সুবিধা হয়।
খাবারের মাধ্যমে যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায়
সত্যি বলতে মানব দেহে যেসকল যৌন চাহিদা সম্পর্কিত সমস্যা দেখা যায়, সেগুলোর অধিকাংশ সমস্যা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। কেননা, যৌন সমস্যা গুলো মূলত দেহের ভিটামিন এর অভাবে হয়।
আর আপনি যদি পরিমিত পরিমান ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহন করেন। তাহলে আপনি প্রাকৃতিক ভাবে আপনার যৌন শক্তির সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
তো কোন কোন খাবার গুলো খেলে আপনার যৌন শক্তির ভিটামিনের অভাব পূরন হবে। সেই খাবার এর তালিকা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। আর আপনি প্রতিনিয়ত এই খাবার গুলো গ্রহন করার চেষ্টা করবেন। যেমন,
০১ – খালি পেটে রসুন খাবেন
সেক্স রিলেটেড যেসব সমস্যা দেখা যায় যেমন, লিঙ্গ নিস্তেজ হওয়া কিংবা যৌন চাহিদা কমে যাওয়া। এই জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে রসুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সে জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ কোয়া রসুন খেতে হবে। তাহলে আপনার বীর্য ঘন হওয়ার পাশাপাশি যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তবে মনে রাখবেন, একদিনে ১ কোয়ার বেশি রসুন খাবেন না।
০২ – খাঁটি মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন
প্রাকৃতিক ভাবে যেসকল মধু পাওয়া যায়, সেই মধু আমাদের মস্তিস্ক বৃদ্ধি করার পাশপাশি যৌন শক্তি বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
তাই আপনি আপনার নিত্য দিনের খাবারের মধ্যে মধু খাওয়ার অভ্যাস করবেন। আর মাত্র ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ মধু খেলে, আপনি নিজেই এর কার্যকারীতা লক্ষ্য করতে পারবেন।
০৩ – নিয়মিত ডিম খাবেন
আমরা সকলেই জানি যে, ডিম খেলে আমাদের মানসিক চাপ কমে যায়। এর পাশাপাশি ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন আমাদের দেহের হরমোনকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
আর মানব দেহের যৌন চাহিদা কেমন হবে, তা সম্পূর্ণ ভাবে তার দেহের হরমোনের উপর নির্ভর করে। তাই যখন আপনি নিয়মিত ডিম খাবেন, তখন আপনার দেহের মধ্যে থাকা হরমোন গুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকবে।
০৪ – দুধ খেতে ভুলবেন না
খাঁটি দুধের মধ্যে আছে প্রাণিজ ফ্যাট। যা আমাদের শরীরের যৌন চাহিদা কে পূর্বের তুলনায় কয়েক গুন বৃদ্ধি করতে সক্ষম। এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত দুধ পান করেন, তাহলে আপনার বীর্য আগের তুলনায় আরো বেশি ঘন হবে।
তাই প্রতিদিন নিয়ম করে খাঁটি দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে আপনার যৌন চাহিদা প্রাকৃতিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। তবে মাত্রাতিরিক্ত দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
০৫ – সবুজ শাকসবজি খাবেন
আমরা অনেকেই আছি, যারা ভাত খাওয়ার সময় শাক খেতে পছন্দ করিনা। তো আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তাহলে আজ থেকে এই বদঅভ্যাস পরিহার করুন।
কেননা, সবুজ শাকসবজির মধ্যে যে পরিমান ভিটামিন আছে। সেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর পাশাপাশি আমাদের দেহের যেসব সেক্স হরমোন আছে, সেগুলো কে নিয়ন্ত্রিত রাখতে সহায়তা করে।
তাই যতটা সম্ভব, আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক সবজি রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে অবশ্যই আপনার যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
০৬ – কাঁচা ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন
বিভিন্ন ধরনের ফলমূল আমাদের দেহের জন্য উপকারী। আর এই বিষয়টি আমরা সকলেই বেশ ভালো করে জানি। তাই কখনও যদি আপনার মনে হয় যে, আপনার যৌন চাহিদা কম কিংবা আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে।
তাহলে আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা ফল খাওয়ার অভ্যাস করবেন। আর সেই ফলমূল এর তালিকায়, আপেল, আঙ্গুর, কমলা, বেদানা ইত্যাদি রাখার চেষ্টা করবেন।
০৭ – অবশ্যই খেঁজুর খাবেন
অনেক প্রাচীন কাল থেকে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য খেজুর এর ব্যবহার হয়ে আসছে। কেননা, যৌন চাহিদা বৃদ্ধিতে খেজুরের যে পরিমান ভূমিকা আছে, তা আসলে লিখে শেষ করা যাবেনা।
কারণ, যখন আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে ৪/৫ টি করে খেজুর খাবেন। তখন আপনার দেহের মধ্যে থাকা সেক্স হরমোন গুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখবে। এছাড়াও আপনার মধ্যে উদ্দীপনা বৃদ্ধি করবে। তাই আপনি অবশ্যই প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করবেন।
০৮ – মাছ ও মাংস খাবেন
আমরা সবাই জানি যে, মাছ ও মাংসের মধ্যে প্রচুর পরিমান প্রোটিন আছে। আর একজন ব্যক্তি যদি পরিমিত পরিমান মাংস ও মাছ খায়, তাহলে তাদের যৌন স্বাস্থ্যেরও অনেক উন্নতি ঘটবে।
সেজন্য আপনি প্রতি সপ্তাহের ০১ বা ০২ দিন খাদ্য তালিকায় মাছ ও মাংস রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে আপনার দেহের আমিষের অভাব পূরন হবে। যা আপনার যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
নিয়ম মেনে যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায়
উপরের তালিকায় বেশ কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে খাবার গুলো খেলে আপনার দেহের যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
তবে খাবারের পাশাপাশি এমন কিছু নিয়ম আছে। যে নিয়ম গুলো ফলো করার মাধ্যমে আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি করবে। আর এবার আমি আপনাকে ধাপে ধাপে সেই নিয়ম গুলো বলবো।
০১ – পরিমিত পরিমান ঘুমাবেন
প্রত্যেকটা মানুষের জন্য ঘুম অপরিহার্য একটি অংশ। আর আপনি যদি এই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটান, তাহলে সেটি আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যাহত করবে।
তাই এখন থেকে রাত জেগে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। সেইসাথে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া ও খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করবেন।
আর যখন আপনি একটানা কয়েক মাস এই নিয়ম ফলো করবেন, তখন আপনি নিজেই আপনার যৌন শক্তির বৃদ্ধির ফলাফল লক্ষ্য করতে পারবেন।
০২ – মাদক থেকে দুরে থাকুন
একটা কথা সর্বদাই মনে রাখবেন। সেটি হলো, কোনো মাদক মানুষের দেহের জন্য উপকারী নয় বরং পৃথিবীর প্রত্যেকটি মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব আছে। আর দীর্ঘদিন মাদক সেবন করার ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় যৌনস্বাস্থ্যে।
কেননা, আপনি যতো বেশি মাদক সেবন করবেন, আপনার দেহের টেস্টস্টেরন হরমোন এর পরিমান ঠিক ততো বেশি কমতে থাকবে। আর এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় আপনার যৌন চাহিদা স্থায়ী ভাবে কমে যাবে।
তাই আপনি যদি মাদকে আসক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আজ থেকে এই খারাপ পথ থেকে বাইরে আসুন। তাহলে আপনার যৌন শক্তি বাড়বে।
০৩ – হস্তমৈথুন পরিহার করুন
সত্যি বলতে যৌন শক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো, মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন করা। এর কারণ, যখন একটি পুরুষ অতিরিক্ত পরিমানে হস্তমৈথুন করে। তখন তার লিঙ্গ দিয়ে প্রচুর বীর্য বের হয়ে যায়।
আর আমরা সকলেই জানি যে, বীর্যের মধ্যে কোটি কোটি শুক্রানু থাকে। তো যখন আমাদের দেহের মধ্যে থেকে অতিরিক্ত পরিমানে বীর্য বের হয়। তখন আমাদের দেহের হরমোন নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে।
যার ফলে আমাদের দেহে টেস্টস্টেরন হরমোন এর পরিমান কমে যায়। আর আমাদের যৌন চাহিদাও পূর্বের তুলনায় কমে যেতে থাকে। তাই এই খাবার অভ্যাস পরিত্যাগ করার চেষ্টা করবেন।
০৪ – নিয়মিত ব্যায়াম করুন
প্রত্যেকটা পুরুষের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করা বাধ্যতামূলক। কেননা, আপনি যদি সারাদিন ঘরে বসে শুয়ে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরে নানা রকম রোগের বাসা বাঁধবে। তাই আপনি ভুলেও এমন কাজ করবেন না।
বরং আপনার উচিত হবে নিয়মিত ব্যায়াম করা, যেন আপনার শরীর থেকে ঘাম বের হয়। তাহলে আপনার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সেইসাথে আপনার যৌন স্বাস্থ্যও অনেক ভালো থাকবে।
অভিজ্ঞ ডক্টরের মাধ্যমে যৌন শক্তি বৃদ্ধি করার উপায়
যেকোনো রোগ বা সমস্যা হলে আমাদের অবশ্যই ডক্টরের কাছে যাওয়া উচিত। আর আপনি যেহুতু আপনার যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় খুজছেন। সেহুতু আপনাকে অবশ্যই একজন যৌন বিশেষজ্ঞের নিকট যেতে হবে।
কারণ, যখন আপনি একজন যৌন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন। তখন তারা আপনাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে পারবে।
এর পাশপাশি আপনার শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ঔষুধ এর প্রয়োগ করতে পারবে। হয়তবা এতে করে আপনার একটু বেশি টাকা খরচ হবে। কিন্তুু এর ফলে আপনি যে উপকার পাবেন, সেই উপকারীতা আপনার শরীরে সারাজীবন বিদ্যমান থাকবে।
কোন ঔষুধ খেলে যৌন শক্তি বাড়ানো যাবে?
কখন কোন ঔষুধ খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ হবে, সেটি অভিজ্ঞ ডক্টর ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
কেননা, প্রতিটা ওষুধের নির্দিষ্ট পাওয়ার আছে। এখন কোন পাওয়ারের ওষুধ আপনার দেহের জন্য উপযুক্ত হবে। সেটি তখনি নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে, যখন আপনি ডক্টরের সামনা সামনি থাকবেন।
তাই আপনাকে না দেখে, আপনার সমস্যার কথা না শুনে কোনো ঔষুধের নাম বলা আমার ঠিক হবেনা। আর আপনিও ভুল করে অনলাইন থেকে জেনে কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
আর যদি আপনি এমনটা করেন, তাহলে আপনি আপনার যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করতে গিয়ে আরো অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে ফেলবেন।
পরিশেষে যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় ও কিছুকথা
যদি আপনার বৃহৎ কোনো যৌন সমস্যা না থাকে, তাহলে আপনার জন্য উপরে উল্লেখিত যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায় গুলো কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
তবে যদি আপনার যৌন সমস্যা বৃহৎ হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ ডক্টরের শরনাপন্ন হতে হবে।
এছাড়াও আপনি যদি যৌন বিষয়ক আরো নতুন কিছু জানতে চান। তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর যৌন বিষয়ক এমন অজানা বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।