স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়, ভালো স্বামী হতে যা যা করবেন

Last Updated on by Rosmoy

মাসিকের সময় স্ত্রীদের শরীরের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এবং যন্ত্রণাদায়ক হলো মাসিকের ব্যথা বা ক্র্যাম্প। এই সময় একজন স্বামী হিসেবে স্ত্রীর পাশে থাকা এবং তার আরাম ও সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বাংলাদেশি সমাজে এই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা না বলার একটা প্রবণতা রয়েছে, তবে স্ত্রীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাকে সহায়তা করা বৈবাহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই লেখাতে, পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় ও কীভাবে মাসিকের ব্যথায় আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করতে পারেন, সেই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়

পিরিয়ডের সময় স্ত্রীর যত্ন নেওয়া খুবই দরকারি, এতে দাম্পত্য জীবন হয় সুখের, আনন্দের। অনেক স্বামী আছেন যারা এই বিশেষ সময় চলাকালীন স্বামীর কর্তব্য সম্পর্কে জানেন না, তাদের জন্যে পিরিয়ডের সময় স্বামীর ১০ করণীয় কাজ এই লেখাতে তুলে ধরছি।

১. সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রদর্শন

মাসিকের সময় শারীরিক এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এই সময় স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি এবং সমবেদনা দেখানো জরুরি। তার অনুভূতি এবং শারীরিক অবস্থার প্রতি মনোযোগী হন এবং তাকে জানান যে আপনি তার পাশে আছেন। এই সময় তার সাথে ধৈর্য ধরে কথা বলুন এবং তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এটি তাকে মানসিকভাবে অনেকটা স্বস্তি দেবে।

২. শারীরিক সহায়তা প্রদান

মাসিকের সময় স্ত্রী শারীরিকভাবে দুর্বল বা অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকতে পারে। এই সময় আপনি বাড়ির ছোটখাটো কাজগুলোতে তার সাহায্য করতে পারেন। যেমন- রান্না, ঘর পরিষ্কার বা বাচ্চাদের দেখাশোনা করা ইত্যাদি। এভাবে আপনি তার শারীরিক পরিশ্রম কমাতে পারেন, যা তার আরামদায়ক অবস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়_শারীরিক সহায়তা প্রদান
শারীরিক সহায়তা প্রদান

৩. গরম পানির থলির ব্যবহার

গরম পানির থলি বা হট ওয়াটার ব্যাগ মাসিকের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। স্ত্রীকে একটি গরম পানির থলি সরবরাহ করুন এবং তাকে সেটা পেটে বা নিচের পিঠে ব্যবহার করতে বলুন। গরম পানির তাপে পেশিগুলো শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

৪. পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ

মাসিকের সময় স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রীর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন, যেমন- শাক-সবজি, ফলমূল, ডাল, ওটস ইত্যাদি। এছাড়া, পানি পান করাও অত্যন্ত জরুরি। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং হালকা খাবার খেতে উৎসাহিত করুন। ক্যাফেইন এবং অতিরিক্ত মশলাদার খাবার থেকে বিরত থাকতে বলুন, কারণ এগুলো ব্যথা বাড়াতে পারে।

৫. ওষুধ এবং চিকিৎসা সহায়তা

মাসিকের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে ব্যথানাশক ওষুধ কিনে দিতে পারেন। এছাড়া, স্ত্রীর যদি গুরুতর ব্যথা হয়, তবে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা সহায়তা মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।

ওষুধ এবং চিকিৎসা সহায়তা
ওষুধ এবং চিকিৎসা সহায়তা

৬. বিশ্রামের সুযোগ তৈরি করা

মাসিকের সময় শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রীর জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে তিনি সহজেই বিশ্রাম নিতে পারেন। এটি তাকে দ্রুত আরামদায়ক করে তুলবে। কিছু সময়ের জন্য তাকে তার প্রিয় বই পড়তে বা সিনেমা দেখতে উৎসাহিত করতে পারেন, যা তার মনকে প্রফুল্ল রাখবে।

৭. মানসিক সাপোর্ট ও উৎসাহ প্রদান

মাসিকের সময় মানসিক সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ইতিবাচক এবং আশ্বাসমূলক কথা বলুন, যা তার মানসিক অবস্থাকে উন্নত করতে পারে। তাকে বলুন যে মাসিকের ব্যথা স্বাভাবিক এবং এটি কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যাবে। তার সাথে ইতিবাচক কথা বলুন এবং তাকে স্নেহের সাথে যত্ন করুন।

৮. হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং

মাসিকের সময় হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। স্ত্রীকে হালকা ব্যায়াম বা ইয়োগা করার পরামর্শ দিতে পারেন, যা তার শরীরের পেশিগুলোকে শিথিল করবে এবং ব্যথা উপশম করবে। তবে, এই পরামর্শটি তার স্বাচ্ছন্দ্যের উপর নির্ভর করে এবং সে যদি ব্যায়াম করতে ইচ্ছুক না থাকে তবে তাকে জোর করা উচিত নয়।

৯. আরামদায়ক পোশাক প্রদান

মাসিকের সময় আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে নরম, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে উৎসাহিত করুন, যা তার শরীরে আরাম এনে দেবে এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে।

১০. সময়মতো সহায়তা

মাসিকের সময় সঠিক সময়ে সহায়তা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী যদি অনুভব করে যে আপনি সবসময় তার পাশে আছেন এবং তার প্রয়োজনের সময় তাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত, তবে এটি তার মানসিক স্বস্তি বৃদ্ধি করবে। আপনার আন্তরিকতা এবং যত্ন তার প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটাবে।

রিলেটেডঃ দাঁড়িয়ে সহবাস করা নিরাপদ? দাড়িয়ে সহবাস করলে কি হয়?

উপসংহার

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে মাসিকের ব্যথায় স্ত্রীকে সহায়তা করা কেবল একটি দায়িত্ব নয়, বরং এটি ভালোবাসা এবং যত্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করে আপনি তার শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করতে পারেন। 

মনে রাখবেন, সম্পর্কের শক্তি ভালোবাসা, সম্মান এবং সহানুভূতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়, এবং আপনার সহায়তা আপনার স্ত্রীর জন্য এই সময়কে সহজ করে তুলতে পারে।

About The Author

Leave a Comment