বিবাহিত জীবনের সামজিক উদ্দেশ্য হলো বংশবিস্তার ও সন্তান উৎপাদন। তবে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে প্রথমতই আমাদের প্রয়োজন হয় স্বামী স্ত্রীর মিলন, মিলনের ফলে আমরা বাচ্চা জন্ম দিতে পারি। অনেকের মনেই এই প্রশ্ন থেকে থাকে গর্ভধারণ করতে কতটা বীর্য প্রয়োজন? এই লেখাতে আমরা আমরা তা তুলে ধরবো।
মানুষের বংশবৃদ্ধি ও সন্তানধারণের প্রক্রিয়াটি একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়। যখন আমরা বলি “বাচ্চা হওয়ার জন্য কতটুকু বীর্য লাগে,” তখন আমরা আসলে জানতে চাই যে একজন পুরুষের শরীর থেকে নির্গত বীর্যের পরিমাণ কতটুকু হতে হবে যাতে সন্তান ধারণ সম্ভব হয়। এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের মানব প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু মূল বিষয় জানতে হবে।
তাহলে দেরী না করে চলুন জেনে নেই সন্তান গর্ভধারনের জন্য কতটুকু বীর্যের প্রয়োজন হয়?
সহবাস নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে প্রশ্ন করুন এখানেঃ ফেসবুক পেইজ, পেইজে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন!
বাচ্চা হওয়ার জন্য কতটুকু বীর্য লাগে?
মূলত বাচ্চা হতে ১ ফোঁটা শুক্রাণুই যথেষ্ট, তবে এই এক ফোঁটা বীর্য কখন কোন সময়ে কিভাবে কাজে লাগবে তা বুঝতে নিচের বিস্তারিত আলোচনাটি মনযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
বীর্য এবং শুক্রাণু
প্রথমে, বীর্য এবং শুক্রাণুর মধ্যে পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন। বীর্য হল পুরুষের শরীর থেকে নির্গত একটি তরল যা যৌন সঙ্গমের সময় সঙ্গিনীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে। এই বীর্যের মধ্যে থাকে শুক্রাণু, যা ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষিক্তকরণ ঘটায় এবং গর্ভধারণের সূত্রপাত করে।
বীর্য প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত:
শুক্রাণু: এটি বীর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার জন্য প্রয়োজন।
প্লাজমা বা তরল: বীর্যের বেশিরভাগ অংশই প্লাজমা দ্বারা গঠিত, যা শুক্রাণুকে বাহন করে এবং এর প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রস্টেটিক ফ্লুইড: এটি প্রস্টেট গ্রন্থি থেকে নির্গত হয় যা শুক্রাণুকে বেঁচে থাকতে এবং গতি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
রিলেটেডঃ বীর্য পুনরুৎপাদন হতে কতদিন সময় লাগে? জেনে নিন বীর্যের জীবন চক্র
কতটুকু বীর্য প্রয়োজন?
গবেষণা অনুযায়ী, একজন পুরুষের প্রতি নিঃসরণে সাধারণত ২ থেকে ৫ মিলিলিটার বীর্য নির্গত হয়। প্রতি মিলিলিটার বীর্যে প্রায় ১৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকে। এটি শুনতে অনেক বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, গর্ভধারণ ঘটানোর জন্য শুধুমাত্র একটি শুক্রাণুই প্রয়োজন।
তবে, যেহেতু শুক্রাণুদের একটি দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জিং পথ অতিক্রম করতে হয় ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য, তাই অধিক পরিমাণে শুক্রাণু থাকা প্রয়োজন হয়। প্রতিটি শুক্রাণু ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, এবং অনেকগুলি শুক্রাণু মাঝপথে মারা যায় বা হারিয়ে যায়। এই কারণে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য একটি উচ্চ সংখ্যক শুক্রাণু থাকা দরকার।
রিলেটেডঃ সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়: একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ
শুক্রাণুর গুণগত মান
শুধুমাত্র বীর্যের পরিমাণই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর গুণগত মানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রাণুর গুণগত মান সাধারণত তিনটি প্রধান মাপকাঠি দ্বারা নির্ধারিত হয়:
শুক্রাণুর সংখ্যা (Sperm Count): এটি প্রতি মিলিলিটার বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা বোঝায়। কম শুক্রাণু সংখ্যা গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে।
শুক্রাণুর গতিশীলতা (Motility): শুক্রাণুদের গতিশীলতা বা তাদের চলাচলের ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রাণু যদি দ্রুত এবং সঠিকভাবে চলাচল করতে না পারে, তবে তারা ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না।
শুক্রাণুর আকার ও গঠন (Morphology): শুক্রাণুর আকার ও গঠনও গর্ভধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রাণুর মাথার আকার এবং লেজের গঠন ঠিকঠাক না হলে, এটি ডিম্বাণুর সঙ্গে সঠিকভাবে মিলিত হতে পারে না।
বীর্য গুণগত মান প্রভাবিতকারী কারণসমূহ
শুক্রাণুর গুণগত মান অনেকগুলি কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যেমন:
জীবনযাত্রার অভ্যাস: ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, মাদক দ্রব্যের ব্যবহার এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শুক্রাণুর গুণগত মানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
শারীরিক স্বাস্থ্য: সাধারণ শারীরিক অসুস্থতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বা যৌন রোগও শুক্রাণুর গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
বয়স: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর গুণগত মান কমে যেতে পারে, যা গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
গর্ভধারণের জন্য আদর্শ অবস্থান
গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণগত মান ছাড়াও, সঙ্গমের অবস্থান এবং সময়ও গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডিম্বস্খলনের সময় সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, যৌন মিলনের পরে মহিলার শুয়ে থাকা এবং কিছু সময় মাথা নিচু করে থাকা গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে বাড়াতে পারে।
সহবাস নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে প্রশ্ন করুন এখানেঃ ফেসবুক পেইজ, পেইজে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন!
শুক্রাণু এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা
যদি কোনো দম্পতি গর্ভধারণের জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা করে এবং সফল না হয়, তাহলে শুক্রাণুর গুণগত মান পরীক্ষা করানো প্রয়োজন হতে পারে। স্পার্ম অ্যানালাইসিস নামে পরিচিত এই পরীক্ষা শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা এবং গঠন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়।
করণীয়
গর্ভধারণের জন্য সঠিক পরিমাণে এবং গুণগত মানের শুক্রাণু থাকা অপরিহার্য। শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়ানোর জন্য কিছু সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
অ্যালকোহল এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা: ধূমপান এবং অ্যালকোহল শুক্রাণুর গুণগত মানকে কমিয়ে দিতে পারে, তাই এগুলি থেকে বিরত থাকা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ঘুম শরীরের সমস্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে সুষ্ঠুভাবে চলতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য বিশ্রামমূলক কার্যক্রম করতে পারেন।
রিলেটেডঃ দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি: ইসলামে সহবাসের নিয়ম
উপসংহার
“বাচ্চা হওয়ার জন্য কতটুকু বীর্য লাগে” এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে, বীর্যের পরিমাণ এবং এর মধ্যে থাকা শুক্রাণুর গুণগত মান উভয়ই বিবেচনা করতে হবে। গর্ভধারণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বীর্য বা শুক্রাণু থাকা জরুরি নয়, বরং শুক্রাণুর গুণগত মানই মূল বিবেচ্য বিষয়।
প্রয়োজনীয় শুক্রাণু সংখ্যা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস মেনে চলা, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনবোধে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি শুধুমাত্র সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়ায় না, বরং সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও নিশ্চিত করে।