যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ ও পিচ্ছিল করার উপায়

Last Updated on by Rosmoy

সহবাসের সময় যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়া অনেক নারীর জন্য একটি সাধারণ কিন্তু বিব্রতকর সমস্যা হতে পারে। এটি শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে এবং যৌন মিলনের আনন্দকে হ্রাস করতে পারে। 

যোনির শুষ্কতা অনেক কারণেই হতে পারে, যেমন হরমোনের পরিবর্তন, বয়স, মানসিক চাপ, এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু সমস্যা। এই প্রবন্ধে, আমরা যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো, লক্ষণ, এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।

সহবাসের সময় যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ

সহবাসের সময় যোনি শুকিয়ে যাওয়া খুব সাধারণ একটি বিষয়, প্রতি ৩ জন মহিলার মধ্যে ১ জনের এমন হয়ে থাকে এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একোটি বিষয়, নানান কারণে সহবাসের সময় যোনি শুকিয়ে যেতে পারে, এবং কিছু উপায় অবলম্বন করে শুকনো যোনি সহজেই পিচ্ছিল ও তৈলাক্ত করে নিতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে কি করবেন।

যোনি শুকিয়ে যায় কেন?

যোনিপথ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে পিচ্ছিল থাকে যা যৌন মিলনকে সহজ এবং আনন্দদায়ক করে তোলে। যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়ার কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে:

হরমোনের পরিবর্তন: যোনির শুষ্কতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন। বিশেষ করে মেনোপজ, গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যদান করার সময় ইস্ট্রোজেনের স্তর কমে যাওয়ার কারণে যোনি শুকিয়ে যেতে পারে। ইস্ট্রোজেন হরমোন যোনির পিচ্ছিলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই এর স্তর কমে গেলে শুষ্কতা দেখা দেয়।

বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে যোনির প্রাকৃতিক পিচ্ছিলতা কমে যেতে পারে। মেনোপজের পর এই সমস্যাটি সাধারণত বেশি দেখা দেয়।

মেডিকেল চিকিৎসা: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের ওষুধ, এবং ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি যোনিপথের শুষ্কতা সৃষ্টি করতে পারে।

যৌন উত্তেজনার অভাব: সঠিকভাবে যৌন উত্তেজিত না হলে যোনি পর্যাপ্ত পিচ্ছিল হয় না। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, সম্পর্কের সমস্যা, বা সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ না থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

স্বাস্থ্য সমস্যার প্রভাব: ডায়াবেটিস, শারীরিক দুর্বলতা, এবং অটোইমিউন ডিজিজ যোনির পিচ্ছিলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া সঠিকভাবে জল পান না করলে এবং দেহের হাইড্রেশন না থাকলে যোনির পিচ্ছিলতা কমে যেতে পারে।

যোনির ইনফেকশন: যোনির ইনফেকশন বা ভ্যাজাইনাইটিসও যোনি শুকিয়ে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে। ইনফেকশন থাকলে যোনিপথের প্রাকৃতিক পিএইচ স্তর পরিবর্তিত হতে পারে, যা শুষ্কতার কারণ হতে পারে।

যোনি শুষ্কতার লক্ষণ

যোনির শুষ্কতা হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলো:

সহবাসের সময় ব্যথা: যোনিপথ পিচ্ছিল না হলে সহবাসের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এটা যোনির শুষ্কতার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।

খুসখুসে অনুভূতি: যোনিপথ শুকিয়ে গেলে খুসখুসে বা জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

যোনিপথে চুলকানি: শুষ্কতা থাকলে যোনিপথে চুলকানি হতে পারে। এটি ইনফেকশনের সাথে মিশে গেলে আরো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সহবাসের প্রতি অনীহা: শারীরিক এবং মানসিক অস্বস্তির কারণে যৌন মিলনের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।

যোনির শুষ্কতা দূর করার উপায়

যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়া সমস্যার সমাধানের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট ব্যবহার: যোনিপথ শুষ্ক হলে যৌন মিলনের সময় প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এই লুব্রিকেন্টগুলো যোনিপথকে পিচ্ছিল করে, যৌন মিলনকে আরামদায়ক করে তোলে।

হরমোন থেরাপি: যদি যোনির শুষ্কতা হরমোনের কারণে হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে হরমোন থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে। ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ ক্রিম বা পিল যোনির শুষ্কতা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।

জল পান করা: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা দেহকে হাইড্রেটেড রাখে, যা যোনির পিচ্ছিলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল যোনির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এছাড়া সয়া সমৃদ্ধ খাবার ইস্ট্রোজেনের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ যোনির পিচ্ছিলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান বা মানসিক পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।

যোনির শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

যোনির শুষ্কতা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে যা নিরাপদ এবং কার্যকর:

নারিকেল তেল: নারিকেল তেল একটি প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি যোনিপথকে পিচ্ছিল রাখে এবং শুষ্কতা দূর করে।

অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেলও একটি প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট যা যোনিপথে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি ত্বককে শীতল ও মসৃণ করে তোলে।

দই: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই যোনির পিএইচ স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।

ভিটামিন ই: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল যোনির শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে। এটি যোনির ত্বককে মসৃণ ও পিচ্ছিল করে তোলে।

ব্যায়াম: পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বা কেগেল ব্যায়াম যোনির পেশীগুলোকে মজবুত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা শুষ্কতা কমাতে সহায়ক।

যোনি পিচ্ছিল করার উপায়

যোনি পিচ্ছিল করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:

প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট: উপরে উল্লেখিত নারিকেল তেল, অ্যালোভেরা জেল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট যোনিপথকে পিচ্ছিল রাখতে সহায়ক।

প্রস্তুতিমূলক কাজ: সহবাসের আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা, যেমন দীর্ঘ সময়ের ফোরপ্লে, উত্তেজনামূলক কথা বলা এবং সঙ্গীর সাথে মানসিক সংযোগ তৈরি করা যোনিপথকে পিচ্ছিল হতে সহায়তা করে।

লুব্রিকেন্টের ব্যবহার: বাজারে বিভিন্ন ধরনের লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায় যা সিলিকন, জল বা তেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এগুলো যোনিপথ পিচ্ছিল রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

রিলেটেডঃ সহবাসের সময় জ্বালাপোড়া হলে করণীয়: পরামর্শ ও সতর্কতা

উপসংহার

যোনিপথ শুকিয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি সঠিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। হরমোনের পরিবর্তন, বয়স, স্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিভিন্ন কারণে যোনির শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট ব্যবহার, হরমোন থেরাপি, এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা যেতে পারে। 

এছাড়া ঘরোয়া উপায় যেমন নারিকেল তেল, অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে সহজেই যোনির শুষ্কতা দূর করা সম্ভব। মনে রাখা উচিত, যোনির শুষ্কতা একটি প্রাকৃতিক সমস্যা এবং এটি নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। 

সঠিক জ্ঞান এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যায়।

About The Author

Leave a Comment