Last Updated on by Rosmoy
কিশোর, যুবক, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায়শই অন্ডকোষে ব্যাথা দেখা দিয়ে থাকে, ব্যাথা নানা সময়ে নানা কারণে হয়ে থাকে, প্রশ্ন হচ্ছে এই ব্যাথা কি নিরাপদ? বা ডান ও বাম অণ্ডকোষে ব্যাথার কারন কি? কেন হয় এই ধরনের ব্যাথা? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের বিস্তারিত লেখা।
এই লেখাতে যে তথ্যগুলি দেওয়া হবে সেগুলো বড় বড় ইংরেজী জার্নাল ও রিসার্চ থেকে নেওয়া ও মেডিকেলি রিভিউড, তাই আপনি এই লেখার তথ্যকে বিশ্বাস করতে পারেন। তাহলে দেরী না করে চলুন জেনে নেই অণ্ডকোষে ব্যাথার কারন কি?
অণ্ডকোষে ব্যাথা
অণ্ডকোষে ব্যাথা Testicular pain হিসাবে বিশেষ পরিচিত। Testis (TES-tis) হচ্ছে গোলাকৃতির দুটি ডিম যা থলির ভিতরে থাকে। পুরুষদের জন্যে Testis গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো শুক্রাণু বা লক্ষ লক্ষ বীর্য তৈরি করে। যার ফলে পুরুষ বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। এছাড়াও এই ডিমগুলি টেস্টোস্টেরোন হরমোন উৎপাদন করে। টেস্টোস্টেরোন হরমোন হচ্ছে পুরুষদের যৌন জীবনের মূল চাবি।
অণ্ডকোষে ব্যাথা মূলত দুটি Testis বা ডিমেই হয়ে থাকে, কারো ক্ষেত্রে ব্যাথাটা অণ্ড থলিতে বা শিরাতেও হয়ে থাকে। তাছাড়া ব্যাথাটা কখনো হালকা, কখনো খুব তীব্র আকারের হতে পারে, কখনো কখনো মূত্রনালি দিয়ে রক্ত আসতে পারে। এমন পরিস্থিতে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অণ্ডকোষে ব্যাথার কারন কি?
আগেই বলেছি অন্ডকোষে ব্যাথা নানান সময়ে নানান কারণে হতে পারে, নির্দিষ্ট কোন একটা কারণে এই ব্যাথা হয় না, নিচের কারণগুলির কারণে অন্ডকোষে ব্যাথা হয়ে থাকে।
১। কোন কিছুর আঘাত
অণ্ডকোষে ব্যাথার একটি সাধারণ কারণ হলো অণ্ডকোষে কোন কিছুর আঘাত পাওয়া, যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, সাইকেলিং, দৌড়, লাফালাফি ইত্যাদির ফলে সচেতনভাবে অথবা অসচেতনভাবে অণ্ডকোষে আঘাত লেগে অণ্ডকোষে ব্যাথা হতে পারে।
২। কিডনির সমস্যা
অণ্ডকোষে ব্যাথার আরো একটি কমন বা সাধারণ কারণ হলো কিডনির সমস্যা, কিডনিতে পাথরের কারণে ডান ও বাম উভয় অণ্ডকোষে ব্যাথা হতে পারে। ব্যাথা খুব বেশি হলে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে অণ্ডকোষের ব্যাথার উৎস কোথায়।
৩। মুত্রনালীতে সংক্রমণ
ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে অণ্ডকোষে ব্যাথা হওয়া খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়, সাধারণত যৌনবাহিত রোগ যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, হেপাটাইটিস বি এবং সি ইত্যাদির মুত্রনালীতে সংক্রমণ হয়ে থাকে, ফলে অণ্ডকোষে ব্যাথা ছড়িয়ে পরে, সাধারণ তরুণ যুবকদের মধ্যে মুত্রনালীতে সংক্রমণ ও এর ফলে অণ্ডকোষে ব্যাথা দেখা যায়।
৪। টিউমার
টিউমারের ফলে অণ্ডকোষে ব্যাথা দেখা দিতে পারে, তাই যদি অণ্ডকোষ থলিতে কোন কিছু শক্ত অনুভব করে থাকেন, বা কো কিছু এক জায়গায় জমাট বাধা অবস্থায় থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৫। হার্নিয়া
হার্নিয়া ঘটে যখন টিস্যু বা পেটের পেশীগুলির একটি দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে ধাক্কা দেয়। ইনজুইনাল হার্নিয়া হ’ল এক ধরণের হার্নিয়া যা অণ্ডকোষে ধাক্কা দিতে পারে, যার ফলে টেস্টিকুলার ব্যথা এবং ফোলাভাব হয়।
সঠিক চিকিৎসার ফলে ইনজুইনাল হার্নিয়া হ্রাস করতে বা এটিকে আবার আগের জায়গায় ঠেলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
৬। প্রসারিত শিরা
অনেক সময় অণ্ডকোষের শিরাগুলি অস্বাভাবিকভাবে বড়, প্রসারিত হয়ে যায়, একে Varicoceles বলা হয়, এবস্থায় প্রাশয়ই কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশিত হয় না, ফলে চিকিৎসকরা সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা করে থাকেন।
৭। অণ্ডকোষে প্যাঁচ
টেস্টিকুলার টর্জন (Testicular torsion) হ’ল যখন শুক্রাণু কর্ডটি মোচড় দেয় এবং অপর অণ্ডকোষে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয় – সাধারণত আপনার বাম অণ্ডকোষ। এতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা হয়। এটি যে কোনো সময় ঘটতে পারে। অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া একটি Medical Emergency বা জরুরি অবস্থা, যার জন্যে মাঝে মধ্যে যার জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
অণ্ডকোষে প্যাঁচ থেকে ব্যথা অনেক সময় ধীরে ধীরে হয়। এবং কিছু লোকের ক্ষত্রে ব্যাথাটা হালকা থেকে খুব তীব্র রুপ ধারণ করে থাকে।
অণ্ডকোষে ব্যাথা বিপজ্জনক?
অণ্ডকোষ খুবই স্পর্শকাতর জায়গা, এবং পুরুষের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ বিশেষ একটি জিনিষ, এতে কোন ধরনের সমস্যা খুব সিরিয়াসলি নিতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। তা না হলে সমস্যা তীব্র হলে অনেক সময় অণ্ডকোষ কেটে ফেলতে হয়, এবং পুরুষরা বাচ্চা জন্ম দিতেও পারবেন না।
কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন?
নিম্নলিখিত কোনও লক্ষণ অণ্ডকোষে ব্যথার সাথে থাকলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা ভাল:
- অণ্ডকোষের রং খারাপ হলে বা বিবর্ণতা দেখা দিলে
- বমি বমি ভাব হলে
- লিঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক, রক্তাক্ত বা মেঘলা স্রাব হলে
- টেস্টিকুলার ফুলে যাওয়া বা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি বড় হলে।
- ব্যথা যা সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ হয়
সারাংশ
যদি কোনও ব্যক্তি এক বা উভয় অণ্ডকোষে ফোলাভাব বা ব্যথা অনুভব করে তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা ভাল। যদি ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি বমিভাব সৃষ্টি করে তবে তাদের অবিলম্বে চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
অণ্ডকোষে প্যাঁচের ক্ষেত্রে, যত তাড়াতাড়ি কোনও ব্যক্তি চিকিৎসকের সাহায্য চাইবেন, তিনি তার অণ্ডকোষের রক্ত প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য চিকিৎসকের তাৎক্ষণিক মনোযোগ পাবেন।
অণ্ডকোষে ব্যাথার হলে ভয়ের কারণ নাই, বরং দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন, অণ্ডকোষে ব্যাথার অধিকাংশ চিকিৎসাই দেশে খুব সহজে করা যায় এবং দ্রুত এই ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।